আজ, শনিবার | ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | রাত ৩:১৭

ব্রেকিং নিউজ :
শ্রীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজন-সংগ্রামের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ জমে উঠেছে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন মাগুরায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান

মরমী মায়া

অনন্যা হক : মসজিদের পাশের রাস্তা দিয়ে ঢুকতেই কেমন যেন একটা অনুভূতি মনকে আচ্ছন্ন করে।
এরপর প্রথম বড় গেটটা খুলতেই একটা প্রশস্ত জায়গা।
এক দিকে বড় বড় উঁচু গাছ। মেহগনি গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে দম্ভ ভরে।

ওখানে ঢুকলেই শ্বাসটা হালকা হয়ে আসে। খুব পরিচিত একটা বাতাসের ছোঁয়া লাগে গায়ে, আরো গভীর করে শ্বাস নিতে ইচ্ছে করে।

বাড়ি! যেন শুধু বাড়ি নয়। এক সমৃদ্ধ স্মৃতির আধার।
কখনও কষ্টের, কখনও আনন্দের হাজারো স্মৃতি যা মন থেকে কখনও একটুও সরে যায় না।
গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে শক্ত ভাবে যার শেকড় অনেক দূরে। ঠিক তেমনি এক শেকড় যেন শক্ত করে ওখানে আটকে রাখে সব সময়, সে যত দূরেই থাকি না কেন।

ঐ মাটি, গাছ, আকাশ, গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে ফালি ফালি রোদ সব কিছুর এক ভিন্ন মোহ আছে। আঙিনা ভরা বেলী,গোলাপ,যা এখনও বিরাজমান সব স্মৃতি গুলো নিজের মতো বুকে নিয়ে।
এক সময় ছিল একটা শিউলি ফুল গাছ, যার সাথে ছিল মধুর সখ্যতা।সেই গাছটা এখন আর বেঁচে নেই।মনে পড়ে আজানের শব্দ কানে গেলেই ঘুম ভেঙে যেত।
ছিল ভোর দেখার নেশা।

একা উঠে বারান্দায় বসে থেকেছি কত।
শিউলি তলা যেন আমার জন্য অপেক্ষা করতো।
শিশিরে ভেজা শিউলি গুলো গাছেই হাসতো।কাছে গিয়ে ডাল ধরে ঝাঁকি দিলে চোখে মুখে শিশিরের ছোঁয়া সাথে দু চারটা ফুল ঝরে পড়তো, আহা কি অদ্ভুত সে অনুভব!
ঘাসের বুকে পড়ে থাকা শিউলি ফ্রকের ঝালরে, তুলে নিয়ে আসা সে তো ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার।

একটা গন্ধরাজ গাছ ছিল , পাঁচিলের গা ঘেঁষে, খুব প্রিয় ফুল প্রায়ই কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেখতে ভালো লাগতো।
মৃদু মিষ্টি গন্ধ, মখমলের মত নরম শরীর।ওখান থেকেই রাস্তাটা দেখা যেত। তখন সামনের পাঁচিল টা ছিল না। নীচু করে চাটাইয়ের বেড়া দেয়া, রাস্তাটা পরিস্কার দেখা যেতো।

লাল খোয়ার রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতো কখনও দল বেঁধে, কখনও একাকী কোন ছেলে। একটা অন্য রকম আবেগ মনকে ছুঁয়ে থাকতো যেন।
বেড়ে ওঠার বয়স, জীবনকে নতুন করে চেনার বয়স।তখনও মনে কেউ কোন সাড়া জাগাতে পারেনি। তবুও ছিল এক উচাটন কৌতুহল।
সে বয়সে মেয়েদের কাছে ছেলেরা আর ছেলেদের কাছে মেয়েরা যেন ছিল কোন ভিন গ্রহের বাসিন্দা।
বিধিনিষেধর বেড়াজালে আকর্ষণ ছিল ভিন্ন মাত্রার। ছেলেদের চোরা চাহনির অর্থ খুঁজতে মেয়ে দের বেশ আমোদ হতো যেন।
বাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা যাওয়াতে অনেক কড়া পাহারা থাকা সত্ত্বেও এমন করে রোমাঞ্চিত হতে কিছু সুযোগ মিলে যেত বৈকি।

নিজেকে একটা চঞ্চল প্রজাপতি মনে হতো তখন।এখনও সেই মনটাকে দিব্যি তেমন করে ছুঁতে পারি যেন। অযথাই কত স্বপ্ন আর কল্পনা ঘিরে ছিল বসবাস। অনেক দূরে আবছায়া হয়ে সরে গিয়েছে যদিও তবু মাঝে মাঝে মনে হয়, খুব কাছে যেন, হয়তো ধরে ফেলা যাবে সেই প্রতিবিম্বটাকে।

এই বিভিন্ন কালের মনের ভেতরে মনটাকে ছোঁয়া যে একটা নেশা। যেমন মখমলের মত ঐ গন্ধরাজ টাকে যেমন করে মাঝে মাঝে ছুঁতে পারি।

রান্নাঘরে যেতে লিলি ফুলের গাছটা ছিল।
সবুজ পাতাগুলো চারিদিকে মেলে ধরে, মাঝে মাঝে ফুটে থাকতো চিকন ফিলফিলে পাপড়ির লিলি ফুল গুলো।
কত আসা যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে তার এক অন্য রকম সৌন্দর্য উপভোগ করেছি।
সাদা ফুলের বড় কদর আমার কাছে আগাগোড়াই।
একটা মোহ ছড়িয়ে রাখে চারিদিকে রূপ আর গন্ধ নিয়ে।

আর মাধবীলতা?
লতানো গাছটা ঘরের দেয়াল বেয়ে সোজা টিনের চালে উঠে গিয়েছিলো।
লাল সাদার সমন্বয়ে ফুলগুলো লতানো গাছকে জড়িয়ে থোকায় থোকায় ছড়িয়ে থাকতো।
শুধু ফুল টাই না, নামটাও কত মাধূর্য্যে ভরা।

এখন সেই শিউলি, মাধবীলতা আর লিলি ফুলের গাছগুলো আর নেই।
তাদের জন্যেও যেন একটা চিনচিন করা কষ্ট টের পাই মাঝে মাঝে।
কবে কবে ফুলগুলো ঝরে গাছগুলো সময়ের সাথে বিলীন হয়ে গিয়েছে। কম তো মাধূর্য্য বিলি করেনি তারা এক সময়।তাই তো মনের একটা আসন দখল করে বসে আছে এখনও।

এমন অনেক কিছু এক সময় ধীরে ধীরে নেই হয়ে যায়। এভাবেই কষ্ট গুলো আচ্ছন্ন করে মনে, একটা বিরহ জন্ম নেয় মনে। ধীরে ধীরে সময়ের গহ্বরে কত কিছু তলিয়ে যায়, জীবনটায় হারিয়ে যাওয়া ফুলগুলোর মতো একটা মায়া জন্ম নিতে থাকে।
পাওয়া, না পাওয়া,পেয়ে হারানোর দোলাচলে দুলতে দুলতে এগিয়ে যেতে হয়।
নিজের ভেতর থেকেই কত কিছু নেই হতে থাকে,
যে গুলো একাই ঐশ্বর্যমন্ডিত করতো মনকে। কখনও রঙিন করতো মনকে।কিন্তু প্রজাপতির রঙ ছড়ানোর দিনগুলো শুধু স্মৃতিময়তার ভেতর দিয়েই ফিরে যাওয়া যায়।
কত স্মৃতির ভেতরে কখনও চিনচিনে কষ্ট, কখনও অদম্য কষ্ট,কখনও ঝড় বয়ে যাওয়ার মত কষ্ট জড়িয়ে থাকে,সেগুলো বুকের গহীনে লুকিয়ে ইট চাপা ঘাসের মত মৃতপ্রায় করে শেষ করে দিতে হয়।জল, হাওয়া, রোদ দিয়ে তাকে আর শাখা প্রশাখা গজিয়ে মনকে নাই বা নিঃস্ব করি।
নিজের প্রতিবিম্বের সাথে জীবনের হিসাব নিকাশ গুলো এভাবেই করে যেতে হয়।

দূর থেকে দূরে মন যে হারায় এক চেনা গানের সুরে,চেনা সব কিছু অচেনা হয়ে সরে যায় শুধু দূরে,
মাধবীলতার পাপড়িগুলো শুকিয়ে গিয়েছে ঝরে,
শিশির ভেজা শিউলি হাসে স্মৃতির বিভোরে।
আজানের ধ্বনি কানে গেলে দেখি ভোরগুলো আবছায়া,
হৃদয় গহীনে উথলি ওঠে এক নিঃস্ব মরমী মায়া!
#অনন্যা হক।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology